সরিষায় কৃষকের স্বপ্ন পুরণের হাতছানি, ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা – দৈনিক এ আর নিউজ

সরিষায় কৃষকের স্বপ্ন পুরণের হাতছানি, ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা

সরিষায় কৃষকের স্বপ্ন পুরণের হাতছানি, ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা

সিরাজগঞ্জ সলঙ্গা থেকে ফারুক আহমেদ

সরিষার হলুদের ফুলে ছেয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রামাঞ্চলের দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ। যতদুর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। যেন হলুদের রাজ্য। সরিষা ক্ষেতের এ হলুদ রাজ্যে লুকিয়ে আছে কৃষকের স্বপ্ন। প্রতিটি সরিষা ক্ষেতে পৌঁষের কনকনে হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

এ সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন ফসলের মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখে মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। এতে করে সরিষার হলুদ ফুলের হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন সরিষাচাষিরা। ফলে এবার সরিষায় ভৈাজ্যতেলের অভাব কমে আসার অপার সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা।

এক দিকে স্বপ্নে বিভোর কৃষক, অন্যদিকে সরিষার হলুদ ফুলের গালিচা ও মৌ-মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষগুলো।

উপজেলার ০৬টি ইউনিয়নের মধ্যে- ৩নং ধুবিল, ঘুরকা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবাদি ও অনাবাদি আনাচে-কানাচে ও পরিত্যক্ত জমিগুলোতে গত বারের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় দ্বিগুণ হারে সরিষা চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। এসব জমিতে সরিষা গাছে ফুল ও ফল এসেছে। হলুদ ফুলের জমির পাশে মৌ চাষিরা মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছে। এছাড়া পাশাপাশি সরিষা ক্ষেতে ছবি, সেলফি ও ভিডিও ধারণ করছে প্রকৃতিপ্রেমীরা। এছাড়াও আমনের ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় চাষিদের।

রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ এই প্রতিনিধিকে জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমি। তারমধ্যে পুরো উপজেলা জুড়ে ৯ হাজার ১২০ জন কৃষক, কৃষি প্রণোদনা পেয়েছে।

অপরদিকে, অতিরিক্ত আরও ১ হাজার হেক্টর জমি সরিষা চাষের আওতায় আশায় জমির পরিমাণ বেড়ে ১১ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরকারিভাবে উপজেলা ও পৌরসভায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে ১১ হাজার ১২০ জন কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজসহ সার বিতরণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরিষা চাষে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাই ও ফসলের প্রাকৃতিক দুর্যোগরোধে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছে উপজেলা কৃষি অফিস।

উপজেলার নইপাড়া গ্রামের কৃষক আবু সাইদ জানান, বষা মৌসুমে পানির নিচে থাকে এ এলাকার জমিগুলো। তখন ধান চাষ করা যায় না। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতিবারের মতো এবারও সরিষা চাষ করেছি। তবে, এ মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও সার পাওয়ায় গতবারের চেয়ে আরও ৩ বিঘা জমিতে বেশি সরিষা চাষ করেছি। সরিষাতে এখন ফুল ফুটেছে, কিছু দিন পরে ফুল ঝরে পরবে। সরিষার ভাল ফলন দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সরিষায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।

আমশড়া গ্রামের সরিষা চাষি আব্দুল খালেক বলেন, এবার সরিষার ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে। দেড় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। শুধু আমাদের নয়, আশেপাশের সকল চাষিদের ফসল ভাল দেখা যাচ্ছে। তবে, হাল চাষের খরচ বৃদ্ধি ও অন্যান্য খরচ বেশি হওয়ায় কাঙ্খিত দাম নিয়ে শঙ্কা। দাম ভাল হলে গত বারের চেয়ে লাভের অংক বেশি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং সরিষার ভাল মূল্য পেলে এ অঞ্চলে সরিষা চাষের পরিধি আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করছি। আমি গত আমন মৌসুমে আমনে ভাল ফলন হয়নি। তাই আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমি সরিষা করেছি। আসা করছি ঘাটতি পুষে নিতে পারবো।